আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ব্যবসার জন্য বিদেশে পার্সেল পাঠিয়ে থাকেন অথবা পার্সোনাল কাজে বিদেশে বিভিন্ন পার্সেল পাঠিয়ে থাকেন ৷ বিশেষ করে যাদের রপ্তানি ব্যবসা থাকে তারা বিভিন্ন স্যাম্পল অথবা বড় আকারের পার্সেল বিদেশে পাঠিয়ে থাকেন ৷ এসব কারনে কুরিয়ারে পার্সেল পাঠালে কি ধরনের খরচ হতে পারে এটা জানা খুব জরুরি ৷ আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদেরকে বিদেশে পার্সেল পাঠানোর খরচ নিয়ে বিস্তারিত দেখানোর চেষ্টা করব ৷
মুলত বিদেশে পার্সেল পাঠানোর খরচ নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর ৷
যেমনঃ
গন্তব্য দেশ (Destination Country)
– যেমন: ইউএসএ, ইউকে, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া – প্রতিটির রেট ভিন্ন। দূরত্ব এবং গন্তব্য দেশে বাংলাদেশের পার্সেল যাওয়ার ভলিওমের উপর নির্ভর করে ওই দেশের পার্সেল যাওয়ার রেট ৷ অনেক সময় দেখা যায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পার্সেল খুব কম রেটে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো যায় ৷ আবার পর্শ্ববর্তী আরেকটি দেশে পার্সেল পাঠাতে বেশি রেটের প্রয়োজন হয় ৷ এটি মূলত কুরিয়ার কোম্পানি নিজেরাই বিভিন্ন জোনে ভাগ করে বিভিন্ন ধরনের রেট নির্ধারণ করে থাকে ৷
ওজন (Weight of the Parcel)
– সাধারণত ০.৫ কেজি বা ১ কেজি থেকে শুরু করে যত বেশি ওজন, তত বেশি খরচ।
পার্সেল পাঠানোর একটি মিনিমাম খরচ থাকে অর্থাৎ যদি আপনি এক গ্রাম কোথাও পাঠান এটিকে আধা কেজি অর্থাৎ ৫০০ গ্রাম ধরে পাঠানো হবে ৷ তবে কুরিয়ার কোম্পানির নিয়ম হলো আপনি যত বেশি পরিমাণে পন্য কুরিয়ারের পার্সেল করবেন কেজিপ্রতি রেট ততটা কমে আসবে অর্থাৎ আপনি যদি পাঁচ কেজি পরিমাণ পার্সেল কুরিয়ার করেন সেটি যদি প্রতি কেজি ১০ ডলার করে ধরা হয় তাহলে ১০০ কেজি যদি কুরিয়ার করেন সেখানে প্রতি কেজি ৭ থেকে ৮ ডলার ধরা হবে অর্থাৎ পণ্যের পরিমাণ বাড়লে কেজি প্রতি রেট কমে আসে ৷
প্রকার (Parcel Type)
– ডকুমেন্ট, কাপড়, ইলেকট্রনিক্স, খাদ্যদ্রব্য (food items) – এসবের উপর আলাদা নিয়ম ও রেট।
প্রত্যেক অন্যের কুরিয়ারের রেট এক এক রকম হয় না ৷ বিভিন্ন পণ্য ভেদে পার্সেল এর রেট এক এক রকম হয়ে থাকে ৷ যেমন আপনি যদি ডকুমেন্টস পাঠান সেটি খুব কম রেটে পাঠাতে পারবেন ৷ আবার যদি খাদ্যদ্রব্য পাঠান সেখানে অনেক বেশি রেট দিয়ে পাঠাতে হবে৷ আবার যদি আপনি গার্মেন্টস আইটেম পাঠান সেখানে অনেক কমে আপনি পাঠাতে পারবেন ৷
ডেলিভারি টাইম (Speed)
– Express/EMS (দ্রুত) vs Regular/Post (সাধারণ)
ডেলিভারি টাইম এর উপরেও নির্ভর করে পার্সেল এর রেট কত হবে ৷ আপনি যদি খুব দ্রুত সার্ভিস নিতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে অতিরিক্ত পে করতে হবে ৷ আবার আপনি যদি রেগুলার সময়ের মধ্যে পাঠাতে চান সেখানে আপনি কিছুটা কম টাকায় পাঠাতে পারবেন ৷
কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান
যেমন: DHL, FedEx, Aramex, UPS, EMS (Bangladesh Post), TNT ইত্যাদি।
কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের উপরেও পার্সেল এর রেট অনেক অংশে নির্ভর করে ৷ যেমন আপনি যদি একটা পণ্য এরামেক্সে পাঠান, সেটা যদি আপনার কাছ থেকে ২৫০০ টাকা কেজি রেট ধরে এই একই পণ্যটি আপনি ডিএইচএল এর মাধ্যমে পাঠালে মিনিমাম ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ করতে হবে ৷ মূলত এসব কুরিয়ারের সার্ভিস এবং তাদের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ভ্যালুর উপরে নির্ভর করে দাম নির্ধারণ করা হয় ৷ সেজন্য আপনারা যখন পন্য কুরিয়ারে পাঠাবেন তখন অবশ্যই বিভিন্ন কুরিয়ার কোম্পানির সাথে কথা বলে নিবেন ৷
একটা ধারণা দিতে — ঢাকা থেকে কিছু দেশ অনুযায়ী পার্সেল রেট (প্রায়):
গন্তব্য ১ কেজি (প্রায়) ৫ কেজি (প্রায়) সার্ভিস টাইপ
USA ৳2500–3500 ৳8000–12000 Express
UK ৳2200–3000 ৳7500–11000 Express
KSA ৳1800–2500 ৳6000–9000 Express
India ৳1200–2000 ৳4000–7000 Express
Canada ৳2600–3500 ৳9000–13000 Express
Bangladesh Post Office (EMS)–এর মাধ্যমে পাঠালে খরচ কিছুটা কম হয়, কিন্তু সময় লাগে বেশি (৭–১৫ দিন)। আপনি সরাসরি ঢাকা জিপিওতে গিয়ে কথা বললে বিস্তারিত জানতে পারবেন ৷
কিছু পণ্যে সীমাবদ্ধতা : যেমন ব্যাটারি, তরল, খাবার, ওষুধ ইত্যাদি।
কুরিয়ারে সকল পন্য সাধারন নিয়মে পাঠানো যায় না ৷ কিছু পন্য পাঠাতে আপনাকে বিশেষ ধরনের কুরিয়ার সার্ভিস নিতে হবে ৷ যেমন ব্যাটারি আছে এ রকম কোন পন্য পাঠাতে হলে DGR ডিক্লারেশন করে পাঠাতে হবে ৷ সে জন্য এক্সট্রা সার্ভিস চার্জ দিতে হবে কুরিয়ার কোম্পানিকে ৷
আবার যদি আপনি ঔষধ সামগ্রী পাঠাতে চান তবে তাহলে আপনাকে ঔষুধের সাথে প্রেসক্রিপশন জমা দিতে হবে ইনশাআল্লাহ ছাড়া ঔষধ সামগ্রী তে পাঠানো যায় না ৷
এছাড়া লিকুইড আইটেম দিতে পাঠাতে হবে আপনাকে DGR ডিক্লারেশন করে পাঠাতে হবে ৷ তবে এই ধরনের পন্য সকল কুরিয়ার পরিবহন করে না ৷ বিশেষ কুরিয়ার এই ধরনের অন্য পরিবহন করে থাকে ৷
আপনি যদি নিয়মিত পার্সেল পাঠাতে চান (ব্যবসায়িকভাবে), তাহলে কুরিয়ার কোম্পানির সাথে চুক্তি ভিত্তিক রেট নিতে পারেন। অনেক কুরিয়ার কোম্পানি ব্যবসায়ী বা এজেন্টদের জন্য ডিসকাউন্ট রেট দেয়।
আপনি যদি কুরিয়ার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক (contract-based) রেট নিতে চান, তাহলে আপনি অনেক কম দামে পার্সেল পাঠাতে পারবেন এবং নিজের সার্ভিসে ভালো লাভও রাখতে পারবেন।
চুক্তিভিত্তিক রেট কিভাবে নিতে হয়:
প্রথমে বিশ্বস্ত কুরিয়ার কোম্পানি নির্বাচন করুন, যেমন DHL, FedEx, Aramex, TNT, UPS স্থানীয় এজেন্ট বা রি-সেলার (তারা মূল কোম্পানির রেট থেকে ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকে)৷ তাদের হট লাইনে আপনি যোগাযোগ করতে পারেন অথবা তাদের অফিসে গিয়ে কথা বলতে পারেন ৷ সেখানে আপনি একটি এজেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে ৷
তারা আপনাকে বেশ কিছু বিষয়ে প্রশ্ন হতে পারে যেমন, মাসে কয়টা পার্সেল করতে পারেন, কোন দেশে সবচেয়ে বেশি শিপমেন্ট হয় ? কি পরিমাণ ওজনের পার্সেল প্রতি মাসে পাঠিয়ে থাকেন ? আপনার ব্যবসার ধরন কি ?
একাউন্ট খোলার পর আপনি যদি পেমেন্ট ক্যাশে না দিয়ে মাস শেষে দেন (credit account), সেটা নিয়েও আলোচনা করবে তারা ৷
রেট চার্ট ও কমিশন বুঝে নিন:
সবকিছু ঠিক থাকলে তারা আপনাকে একাউন্ট খোলার ফর্ম মেইল করে বা হার্ড কপি পাঠাবে ৷ সেখানে একটি রেট চার্ট থাকবে ৷ ঐ চার্টে প্রতিটি দেশের জন্য ওজন অনুযায়ী রেট চার্ট আপনি কতটুকু কমিশন/প্রফিট রাখতে পারবেন কখন কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স লাগে, সেগুলোও বিস্তারিত লেখা থাকবে ৷