বর্তমানের ইসরাইল রাষ্ট্রই কি বনি ইসরাইল জাতি?
Posted on: 2021-05-17 23:43:04 | Posted by: Mohammed Ziaul Hoque
২০০৮ সালে ইজরায়েলের ৭৩ লক্ষ মানুষের মধ্যে ৭৫.৬ শতাংশ ইহুদি ছিল। ইজরায়েলের ইহুদি জনসংখ্যার প্রায় ৪৪.৯ শতাংশ হয় মিজরাহি বা সেফ্রাদি, ৪৪.২% আশকেনাজি
 হিসেবে চিহ্নিত, প্রায় ৩% বেটা ইজরায়েল এবং ৭.৯% মিশ্র বা অন্যান্য। 
ইজরায়েলিরা নিজেদের ফিলিস্তিনের আদিবাসী প্রাচীন ইস্রায়েলীয়দের বংশধর 
হিসেবে বিবেচনা করে, যারা সহস্রাব্দ ধরে বিদেশে ঘুরে বেড়ানোর পর তাদের 
মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছে। বাইবেলের সময় থেকে আধুনিক যুগে মধ্য প্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকাতে বিদ্যমান ইহুদি সম্প্রদায়ের বংশধররা মিজরাহি চিহ্নিত। সেফ্রাদিরা আসলে স্পেন ও পর্তুগালে (Iberian Peninsula ) করে। তখন তারা পালিয়ে আসে নর্থ আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম শাসিত অঞ্চলে। আশকেনাজি ইহুদিরা মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের ইহুদীদের বংশধর
 (যেমন, জার্মানি,অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, রাশিয়া, 
ইউক্রেন, লিথুয়ানিয়া)। হিব্রু ভাষায় "আশকনাজ" জার্মানিকে বোঝায়। 
শক্তিশালী দাবি আছে, আশকেনাজি ইহুদীরা মধ্যযুগে ধর্মান্তরিত পৌত্তলিক 
খাজারদের বংশধর। আর্থার
 কোয়েস্টলার তার ১৯৭৬ সালের বই The Thirteenth Tribe এ যুক্তি দেখিয়েছেন 
যে আশকেনাজিরা মধ্য এশিয়ার একটি তুর্কি উপজাতি থেকে উদ্ভূত, যাকে বলা হয় 
খাজার, যারা ৮ম শতাব্দীতে ইহুদি ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। ইজরায়েলের তেল 
আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক শ্লোমো স্যান্ড তার বই The Invention of 
the Jewish People নামক বইয়ে যুক্তি দেখিয়েছেন যে অধিকাংশ আধুনিক ইহুদী ইজরায়েলের প্রাচীন ভূমির অধিবাসী নন।
 অনেক পরে তারা ইহুদী পরিচয় গ্রহণ করে। তবে এর বিপরীত মতও আছে। এ ব্যাপারে
 বিস্তারিত গবেষণার সুযোগ আমার নেই। কাজেই কোন পক্ষই আমি নিতে পারছি না। আশকেনাজি
 ইহুদীরা বিপুল সংখ্যক নোবেল পুরস্কার জিতেছে। তারা মার্কিন জনসংখ্যার 
প্রায় ২% এবং বিশ্বের জনসংখ্যার ০.১%। ২৩% ধনী আমেরিকান, অস্কার বিজয়ী 
চলচ্চিত্র পরিচালকদের ৩৮% এবং অসলো পুরস্কারপ্রাপ্তদের ২৯%, বিংশ শতাব্দীতে
 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নোবেল বিজয়ীদের ২৭% আশকেনাজি ইহুদি। আলবার্ট 
আইনস্টাইন ছিলেন একজন আশকেনাজি ইহুদী। আমেরিকান ইহুদিদের ৯০% আশকেনাজি। 
তিনি ইতিবাচক এবং রূপক বিজ্ঞানকে সমর্থন করেন এবং গ্রহণ করেন। রাশিয়ান 
ইহুদিদের মধ্যে বৃহত্তম দল আশকেনাজি। ইজরায়েলের প্রতিষ্ঠাতারা ইউরোপ থেকে এসেছিল। তারা অবকাঠামো তৈরি করে, সরকার এবং সেনাবাহিনী গঠন করে। তাই তারা অধিকাংশ বিষয়ের দায়িত্বে ছিল এবং মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদী ভাইদের তারা আদিম হিসেবে বিবেচনা করত।
 এমনকি দুই দলের মধ্যে আন্তঃবিবাহ অনেক বছর ধরে নিষিদ্ধ ছিল। আবার ইউরোপীয়
 ইহুদীদের মধ্যে জার্মান এবং ইংরেজ ইহুদিদের উঁচুজাত এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে 
আসা ইহুদিরা নিচু জাত বলে বিবেচিত হত। ইউরোপ থেকে ইজরায়েলে আসে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যনীতি, যা এখনো ইজরায়েলি সমাজের একটি বিশিষ্ট। যদিও কেউ কেউ তা অস্বীকার করতে চান। আরব দেশগুলো থেকে আসা ইহুদিদের অধিকাংশই ইজরায়েল গঠনের পর আসে। বনী
 ইসরাইল মানে হযরত ইয়াকুবের বংশ, নবী ইয়াকুব ইসরাইল হিসাবেও পরিচিত। 
জ্যাকব নামেও পরিচিত তিনি। যিনি ইসহাকের পুত্র এবং ইব্রাহামের নাতি। তাদের 
সকলের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হোক। নবী ইয়াকুবের ১২ পুত্র ছিল। রূবেণ, 
শিমোন, লেবীয়, যিহূদা, দান, নাফতালি, গাদ, আশের, ইসাচার, জেবুলুন, ইউসূফ 
আ. ও বেনি আমিন। যিহূদা বা ইয়াহুদা গোত্রের ধর্মকে ইহুদি ধর্ম বলা হত। ঈসা 
আ. (যীশু) যিহূদা গোত্রের একজন সদস্য ছিলেন। মনে রাখতে হবে তাওরাতে বা তালমুদে ইহুদি নামে কোন ধর্মের উল্লেখ পাওয়া যায় না। যেভাবে বাইবেলে খ্রিস্ট নামে কোন ধর্মের উল্লেখ নেই।
 আসলে মোজেস (মুসা আ.) ও জেসাস (ঈসা আ.) এক আল্লাহর উপাসনা কারী অর্থাৎ 
মুসলিম। মুসলিম মানেই এমন ব্যক্তি যিনি এক আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করেন, 
অন্য কাউকে বা কিছুকে উপাসনা করেন না। কোরআনে কিন্তু ইসলামের উল্লেখ আছে — আল্লাহতায়ালা বলেন, 'নিশ্চয় আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন (ধর্ম ও বিধান )একমাত্র ইসলাম' (সূরা আলে-ইমরান-১৯ রাসূল
 সঃ এর জন্ম হয়েছিল বনি ইসমাইল গোত্রে। মদিনার অধিকাংশ ইহুদিরা তাঁকে নবী 
হিসেবে মেনে নিতে পারেনি, কেননা ইহুদিরা বনি ইসরায়েল বংশের বাইরে কাউকেই 
নবী মানতে রাজি ছিল না।