মুল পাতা

তালিবান কারা? তাদের সম্পর্কে আপনি কী মনোভাব পোষণ করেন?


Posted on: 2021-05-17 23:48:36 | Posted by: Mohammed Ziaul Hoque

আফগান তালেবানদের লক্ষ্য হচ্ছে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।

তালেবান নামটির অর্থ, "ছাত্র" ; ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বরে মোল্লা ওমর ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় কান্দাহার প্রদেশে এই গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

মোল্লা ওমর

মোল্লা ওমর ১৯৫৯ সালের দিকে কান্দাহারের নিকটবর্তী নোদেহ গ্রামে দরিদ্র, ভূমিহীন কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত আক্রমণের পর জিহাদে যোগ দেন। তালেবানরা মোল্লা ওমরকে নিয়ে ৫২০ পৃষ্ঠার একটি বই 'ওমর-ই-সালিস' প্রকাশ করেছে।

১৯৭৮ সালে তোলা মোল্লা ওমরের ছবিটি প্রথম তালেবানের অফিসিয়াল সাইটে পোস্ট করা হয়। তিনি সোভিয়েতদের সাথে লড়াই করা মুজাহিদিনদের মধ্যে একজন ছিলেন। আফগান যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত শিক্ষার্থীরা বিপুল সংখ্যায় তার সাথে যোগ দেয়। পাকিস্তান এই সংগঠনকে সমর্থন করে।

তালেবানরা ১৯৯৪ সালে কান্দাহার দখল করে। ১৯৯৫ সালের মধ্যে ১২টি আফগান প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ১৯৯৮ সালের মধ্যে কাবুলসহ এটি দেশের ৯০% অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে।

তালেবান শাসন (১৯৯৬-২০০১) শুধুমাত্র পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত স্বীকৃতি দেয়। ওসামা বিন লাদেন ১৯৮০ এর দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে লড়াই করা বিদেশী মুজাহিদিনকে সংগঠিত করেছিলেন। আল কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেন তালেবানদের আর্থিকভাবে সহায়তা করেন। তালেবানরা ওসামাকে আফগানিস্তানে আশ্রয় দেয়।

9/11 এবং আমেরিকান আক্রমণ

মোল্লা ওমর প্রথম ৯/১১ এর নিন্দা করেন। তিনি হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন।

অপারেশন এন্ডুরিং ফ্রিডম-এর অংশ হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান আক্রমণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার আফগান সমর্থক নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের নেতৃত্বে ন্যাটো জোট একে একে প্রধান প্রদেশগুলির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

জার্মানির বনে আফগানিস্তান বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তালেবান প্রশাসনকে উৎখাত করার পর আফগান নেতারা হামিদ কারজাইকে আফগান অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের প্রধান হিসেবে বেছে নেন, পরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তিনি।

তালেবানের পুনরায় উত্থান

এই আক্রমণের পর মোল্লা ওমরের নেতৃত্বে তালেবানরা পুনরায় একত্রিত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহকারী বাহিনী (আইএসএএফ) এবং আফগান সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে। তালেবানরা ২০০৬ সাল থেকে দেশের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ পেতে শুরু করে।

মোল্লা ওমর ২০১৩ সালে করাচির একটি হাসপাতালে যক্ষ্মা রোগে মারা যান বলে জানা গেছে। এই সংবাদটি ৩০ জুলাই ২০১৫ পর্যন্ত গোপন রাখা হয়েছিল। শুরার অধিকাংশ মোল্লা আখতার মোহাম্মদ মনসুরকে মোল্লা ওমরের স্থলাভিষিক্ত হিসাবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৬ সালে ড্রোন হামলায় নিহত হন মোল্লা আখতার মোহাম্মদ মনসুর।

তালেবানের নতুন নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা কান্দাহারের একজন আলেম। ১৯৮০-এর দশকে তিনি আফগানিস্তানে সোভিয়েত সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে জড়িত ছিলেন। তিনি তালেবান আদালতে একজন জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ছিলেন, পূর্ববর্তী তালেবান প্রধান আখতার মোহাম্মদ মনসুরের ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মোল্লা ইয়াকুব তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের জ্যেষ্ঠ পুত্র নতুন তালেবান প্রধানের দ্বিতীয় ডেপুটি হিসেবে নিযুক্ত।

তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার বছরের পর বছর পাকিস্তানের কারাগারে কাটিয়েছেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনায় তালেবানের রাজনৈতিক প্রধান এবং প্রধান আলোচক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

কাতারের দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা

কাতারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং উপ-তালেবান নেতা মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার

তালেবানরা কাতারের দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনায় সতালেবানরা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে অস্বীকার করে। এর পরিবর্তে তালেবানরা 'সহিংসতা হ্রাসের' মতো কিছু প্রস্তাব দেয়। ২০২০ সালের ১ মার্চ দোহা চুক্তি স্বাক্ষরের পরের দিন তালেবানপন্থী দৈনিক রোজনামা উম্মাতের প্রথম পাতায় লেখা ছিল: 'আমেরিকান পরাজয়ের জন্য ইসলামিক বিশ্বকে অভিনন্দন।'

ওসামা বিন লাদেনের সময় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান আমিরের প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেছে আল-কায়েদা, তারাও আমেরিকার 'অপমানজনক পরাজয়' উদযাপন করেছে। বর্তমান আমির মোল্লা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা আমেরিকার বিরুদ্ধে বিজয় উপলক্ষে দশটি ভেড়া উৎসর্গ করেন।

তালেবান আশরাফ ঘানির সরকারকে জোর পূর্বক অপসারণ করে কাবুলে ক্ষমতা দখলের পথে লড়াই করার পরিকল্পনা করেছে। রোজনামা উম্মাতের একটি নিবন্ধে লেখা ছিল: 'হাক্কানি নেটওয়ার্ক [ইসলামিক আমিরাতের] যোদ্ধারা কাবুল দখলের প্রস্তুতি শুরু করেছে...'; আর যদি 'আফগান তালেবানের নেতৃত্ব পরিষদ অনুমতি দেয়, তাহলে হাক্কানি নেটওয়ার্কের যোদ্ধারা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কাবুল দখল করে নেবে এবং আশরাফ ঘানির ভাগ্য ডঃ নাজিবের মতো হবে।' মুজাহিদিনরা ১৯৯৬ সালে প্রাক্তন আফগান রাষ্ট্রপতি ডঃ মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহকে ফাঁসি দিয়েছিল।

দোহা চুক্তির পর কয়েক মাস ধরে তালেবানদের উদযাপন অব্যাহত ছিল। ২০২০ সালের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে তালেবান জিহাদকে তার আদর্শ হিসেবে বহাল রেখে একটি সরকারী বিবৃতি প্রকাশ করে।

হাক্কানি নেটওয়ার্ক

হাক্কানি নেটওয়ার্ক একটি আফগান গেরিলা গোষ্ঠী। এই দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন মৌলভী জালালউদ্দিন হাক্কানি এবং তার ছেলে সিরাজউদ্দিন হাক্কানি।'হাক্কানি' শব্দটি পাকিস্তানের মাদ্রাসা দারুল উলূম হাক্কানিয়া থেকে এসেছে, জালালউদ্দিন হাক্কানী ওই মাদ্রাসায় ছিলেন। এটি তালেবানদের একটি শাখা। হাক্কানী নেটওয়ার্ক ছিল সিআইএ-এর অর্থায়িত সোভিয়েতবিরোধী গেরিলা গোষ্ঠীগুলির মধ্যে একটি। ১৯৯৫ সালে হাক্কানি নেটওয়ার্ক তালেবানদের প্রতি আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তালেবানরা টুইটারের মাধ্যমে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জালালউদ্দিন হাক্কানির অসুস্থতায় মৃত্যুর কথা ঘোষণা করে। সিরাজউদ্দিন হাক্কানি - জালালউদ্দিনের ছেলেদের একজন এবং বর্তমানে নেটওয়ার্কের দৈনন্দিন কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

আবদুল্লাহ আজ্জাম এবং ওসামা বিন লাদেন, যারা উভয়েই হাক্কানিদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তাদের কর্মজীবন শুরু করেন এবং সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রশিক্ষণ নেন। আল-কায়দা এবং হাক্কানি নেটওয়ার্ক একসাথে বিবর্তিত হয়েছে, এবং তারা ইতিহাস জুড়ে পরস্পরের সাথে জড়িত এবং আজ পর্যন্ত তাই রয়েছে। দুই সংগঠনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হচ্ছে আল-কায়েদা বৈশ্বিক; যেখানে হাক্কানি শুধুমাত্র আফগানিস্তান এবং পশতুন উপজাতি অঞ্চলে আগ্রহী।

উত্তর পাকিস্তানের হাক্কানি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলি অন্যান্য ইসলামিক সংগঠন, যেমন আল-কায়েদা, পাকিস্তানি তালিবান (টিটিপি), জইশ-ই-মহম্মদ (জইশ), লস্কর-ই-তৈবা (এলইটি) এবং ইসলামিক মুভমেন্ট অফ উজবেকিস্তানের (আইএমইউ) সদস্যদের কৌশলগত নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবেও কাজ করেছে।

তালেবানদের সম্পর্কে আমার মনোভাব

আমি আল্লাহর জন্যে তালেবানদের ভালোবাসি। আল্লাহ আমাদের গুনাহগুলো মাফ করুন, ভুলগুলো সংশোধন করুন। কাফের বিরুদ্ধে আমাদের বিজয় দিন।


Leave a Comment:

Login to comment