কে এই Nas Daily? যেভাবে প্রমোট করা হচ্ছে ইসরায়েলের গোপন এজেন্ডা!
Posted on: 2021-05-21 18:46:05 | Posted by: MD Bayzid
লিখেছেন-S M Ashique ভাই❤
______
ফিলিস্তিনি ব্লগার নাস ডেইলিকে চিনে না এমন মানুষ আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে খুবই কম আছে। বিশেষকরে ইয়াং ও ইউনিভার্সিটি লেভের শিক্ষার্থীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি নাম। তার মূল নাম নুসেইর ইয়াসিন। এর ভিডিও গুলো নিয়ে আমাদের আলোচনার কোন প্রয়োজনই ছিল না যদি তার ভিডিও গুলো অন্যান্যদের মতো শুধু অর্থ উপার্জনের জন্যই হতো অথবা তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও আমাদের আলোচনার প্রয়োজন ছিল না যদি শুধুমাত্র সেটা ইউরোপ-আমেরিকায় বসবাস করা আমোদ-ফুর্তিতে লিপ্ত আর দশজন এশিয়ান যুবকের মতো হতো। কিন্তু যখন বিষয়টা এমন হয়ে যাচ্ছে যে, সে একটি নির্দিষ্ট চিন্তাধারা অনুসরণ করছে আর সুক্ষ্নভাবে সেটা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং আপনি এটাও দেখতে পাচ্ছেন বাংলাদেশের উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের বড় একটা অংশ তার ফ্যান হয়ে আছে তখন তার এ ভিডিওর বিষয়গুলো মানুষের সামনে তুলে ধরাটা খুবই প্রয়োজন।
নুসেইর ইয়াসিনের বাবা মা দুইজনই ফিলিস্তিনি মুসলিম এবং তার জন্ম ইসরাইলে ১৯৯২ সালে। সে হাভার্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে এবং ২০১৬ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরে ভিডিও বানানো শুরু করে যা সে Nas Daily তে নিয়মিত প্রকাশ করে আসছে। তার প্রায় প্রত্যেক ভিডিওতেই তার গার্লফ্রেন্ড এলিন তামিরকে দেখা যেয়। [1] এলিন একজন ইহুদি। ইসরাইলে জন্মগ্রহণ করে এবং তার আমেরিকান পাসপোর্ট আছে।
নুসেইর তার ধর্ম বিশ্বাসের বিষয়ে ২০১৭ সালে একটি ভিডিও তৈরী করে যাতে সে বলে,
“আমি একজন মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করি এবং বড় হই। আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তাম এবং ১০ বছর রমজান মাসে রোজা রেখেছি। আমাকে ইসলাম শিক্ষা দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে ইসলামই বেহেশতে যাওয়ার একমাত্র পথ। এরপর আমি কিছু অমুসলিমের সাথে বন্ধুত্ব করি খ্রিস্টান, ইহুদি, হিন্দু নাস্তিক...... আমি দেখলাম সবাই তার নিজের ধর্মকে ঠিক বলে আর অপরজনেরটাকে ভুল বলে। তখন আমি সকল ধরণের ধর্ম বিশ্বাস পরিত্যাগ করলাম কিন্তু গড এর প্রতি বিশ্বাস চালিয়ে গেলাম। এবং সিদ্ধান্ত নিলাম আমার ধর্ম আমি নিজে সৃষ্টি করবো। আমি এর নাম দিলাম নাসিজম!” [2]
ভিডিওগুলোর লিংক ইনশাআল্লাহ্ লেখাটির শেষে দেয়া রেফারেন্সে পাবেন।
আরবী ভাষায় ‘নাস’ অর্থ ‘মানুষ’। সে তার তথাকথিত বানানো ধর্মটির নামদিয়েছে ‘নাসিজম’ মানে বলতে পারেন ‘মানবধর্ম’। তো তার এই ভিডিওটি থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সে ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করেছে এবং সে আর মুসলিম নয়। কিন্তু সমস্যা হলো তার অন্যান্য ভিডিওতে সে নিজেকে মুসলিম দাবি করে ইসলামের বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছে। যেমন “Am I a bad Muslim” নামে ২০২০ সালে বানানো একটা ভিডিওতে যার সে বলে,
“গত কয়েক মাস ধরে আমাকে অনেক সমালোচনা শুনতে হচ্ছে যে, আমি নাকি একজন খারাপ মুসলিম। যখন আমি আপনাদেরকে বিশ্বের সমকামীদের রাজধানী ক্যাস্ট্রো (সান ফ্রান্সিসকো) দেখালাম, যখন ভিডিওতে আমি মদ দেখালাম, যখন আমি দেখালাম সেনেগালে কিভাবে পতিতাবৃত্তি বৈধ তখন আমাকে বলা হলো আমি খারাপ মুসলিম। এভাবে যখনই আমি মদ পান করি, ডেটিং করি, ভ্রমণ করি আমাকে বলা হয় খারাপ মুসলিম। এটা ঠিক আমি একজন ধার্মিক মুসলিম না কিন্তু আমি একজন খারাপ মুসলিমও না। কারন আমি আমার চিন্তাধারা কারো উপর চাপিয়েও দিচ্ছি না।” [3]
নিউইয়র্কের একজন ইহুদী ধর্মাবলম্বীর আপলোড করা “I'm Jewish and He's Muslim” একটি ভিডিওতে সে বলে, “সে হলো একজন সুপার ইহুদি এবং আমি হলাম মুসলিম।” এবং এই ভিডিওতে সে দেখায় কিভাবে একজন ইহুদি আর একজন মুসলিম ভাল বন্ধু হতে পারে। [4]
তো বিষয় হলো সে দাবি করেছে যে সে সকল ধর্ম বিশ্বাস পরিত্যাগ করেছে কিন্তু তারপরো অন্যান্য ভিডিওতে নিজেকে অধার্মিক কিন্তু খারাপ মুসলিম না, সহনশীল মুসলিম এসব বলার কি অর্থ থাকতে পারে।
আরেকটি ভিডিওতে সে আমির নামের একজন ব্যক্তিকে দেখায় যার বাবা ফিলিস্তিনি মুসলিম এবং মা মরোক্কোর ইহুদি আর সেই লোকটি বলে যে সে হলো ‘Jewislim’, বাংলা করতে পারেন এভাবে ‘ইহুদি মুসলিম’! নুসেইর এই ভিডিওতে বলে, “আমির দুই ধর্ম মিলেই পালন করে। কারন এদের মধ্যে অমিলের চেয়ে মিলই বেশী। আমির নিরামিষভোজীও বটে। সুতরাং পৃথিবীতে যদি এরকম ১০ লক্ষ বা এরচেয়ে বেশী আমির থাকতো তাহলে পৃথিবীতে মাংস খাওয়ার পরিমাণ অনেক কমে যেত এবং পৃথিবীতে ক্রোধ অনেক কম হতো!” [5]
মিয়ানমারের বিষয়ে সে একটা ভিডিও তৈরী করে যাতে সে বলে, “মিয়ানমারে আসার আগে আমাকে অনেকে সাবধান করে যেহেতু আমি মুসলিম আর মিয়ানমারে মুসলিমদের উপর নির্যাতন করা হয়। কিন্তু মিয়ানমারের ইয়াংগুনে এসে আমি অনেক পজিটিভ বিষয় দেখলাম। এখানে মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে একটি মসজিদ, একটি গীর্জা, একটি সেনেগগ, একটি মন্দির এবং একটি প্যাগোডা রয়েছে। এরকম আপনি কোন পশ্চিমা দেশেও খুঁজে পাবেন না।” [6]
ফিলিস্তিন ইসরাইল ইস্যুতে সে বলে, “এক্ষেত্রে দুইটি মতামত আছে, এক আপনি নিজেকে ফিলিস্তিনি দাবি করবেন এবং ইসরাইলকে অস্বীকার করবেন। দুই, আপনি নিজেকে ইসরাইলের নাগরিক বলবেন এবং ফিলিস্তিনকে আপনি প্রতিবেশী রাষ্ট্র বলবেন এবং সামনে চলতে থাকবেন। আমি দ্বিতীয়টাই বলি এবং সামনে চলি। কারন হলো এ জীবনে এক টুকরো জমির চেয়ে আরো অনেক ভালো এবং বড় বিষয় আছে।” [7]
“গতকাল অনেকে আমি বলেছে ইসরাইলের পক্ষে দাঁড়াতে আবার অনেকে বলেছে ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়াতে। আমি বলেছি পারবোনা। কারন ইসরাঈল-ফিলিস্তিন প্রত্যেকেই কিছু অন্যায় করছে।” [8]
এরকম ধর্ম, ফিলিস্তিন-ইসরাইল, সমকামিতা, পতিতাবৃত্তি, তার গার্লফেন্ডের সাথে ডেটিং প্রভৃতি ইস্যুতে তার অনেকগুলো ভিডিও আছে যেগুলোর কোনটাতে সে নিজেকে ধর্মত্যাগী দাবী করেছে আবার কোথাও নিজেকে মুসলিম দাবি করে মডারেট চিন্তাধারাকে প্রমোট করেছে যেমন ইসরাইলের স্বীকৃতি, সমকামীদের অধিকার, এলকোহল, লীভ টুগেদার প্রভৃতি।
কয়েকদিন পূর্বে সে একটা ভিডিও তৈরী করে যার নাম দেয় “How This Country is Fixing Religion” যাতে সে দেখায় মধ্যপ্রাচ্যের আরব আমিরাত দেশটি কিভাবে বিশাল একটি সমস্যা সমাধান করছে। আর সে সমস্যাটা হলো, নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠ মনে করা! সে সেই ভিডিতে বলে, “কোন ধর্মই অন্য ধর্ম থেকে শ্রেষ্ঠ না। এগুলো শুধুই ভিন্ন ভিন্ন! আরব আমিরাত এই সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের দেশে মসজিদের সাথে গীর্জা, মন্দির, ইহুদীদের সেনেগগ তৈরী করছে। অমুসলিমদের শুয়োরের মাংস খাওয়ার জন্য আলাদা মার্কেটের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। তাদের মদ খাওয়ার জন্য বার বানিয়ে দিচ্ছে। এভাবে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ সেখানে পাশাপাশি সুখে শান্তিতে অবস্থান করছে। এজন্য এখানে গত বছর পোপ এসেছিল, ইহুদীদেরো আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল...।” [9]
তো আরব আমিরাত আরবে আর সমগ্র মুসলিম বিশ্বে মুসলিমদের বিষয়ে কি করছে সেগুলো এখানে আলোচনায় আনছি না। নাস ডেইলি থেকে যেসব হারাম জিনিস প্রমোট করা হচ্ছে তা নিয়েও কিছু এখানে বলবো না। শুধু একটা কথা বলি, কোন মুসলিম কি এটা মনে করতে পারে ইসলাম ধর্ম শ্রেষ্ঠ বরং আল্লাহ্ তায়া'লার মনোনীত একমাত্র জীবন বিধান না? যেখানে আল্লাহ তাআ'লা বলেছেন,
"নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআ'লার নিকট মনোনীত দ্বীন একমাত্র ইসলাম"
"আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইবে কক্ষনো তার সেই দ্বীন কবূল করা হবে না এবং আখেরাতে সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।" (সূরা আলে-ইমরানঃ ৭)
বলতে পারেন, নাস ডেইলির গল্প আমাদের কেন শোনালেন- এর নামতো আজকেই প্রথম শুনলাম। কেন শোনালাম? একবার Nas Daily এর ফেইসবুক পেইজটা থেকে ঘুরে আসুন আর দেখুন আপনার ফ্রেন্ডলিস্টের কতজন লাইক দিয়েছে। হয়তো আপনার পরিবার বা নিকটজনদের কাওকেও পাবেন।এরা সবাই হয়তো ওদের দ্বারা পুরোপুরি প্রভাবিত নয়। কেউ হয়তো আংশিক আর কেউ হয়তো ওদের সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেনা। তাই এই পোস্টে তাদেরকে মেনশন করে জানিয়ে দিন।
আমরা জানি কি নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় Nas Daily এর নুসেইর আর তার গার্লফ্রেন্ডদের কাছে বাংলাদেশ থেকে ছেলে-মেয়েরা শত শত ইমেইল পাঠিয়েছে তাদের পক্ষে একটা ভিডিও বানানোর জন্য? [10]
নুসেইর বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু ওর ইসরাইলী পার্সপোর্ট থাকায় আসতে পারেনি। ইহুদি বান্ধবী এলিনকে পাঠিয়েছিল কারন ওর আমেরিকান পার্সপোর্ট আছে। এলিন তামিরের বাংলাদেশ ভ্রমণের সময় আমাদের সন্তান আর ছোট ভাই-বোনদের তাকে ঘিড়ে যে উৎসব সেটার খবর কি আমরা রেখেছি? [11]
আমরা অনেকেই হয়তো মোবাইলে ইন্টারনেটে বেশী সময় দেই না। কিন্তু আমাদের পরিবারে সবাই কি আমার মতো? কেউ কি ফেইসবুকে অনেক সময় দেয়না? সে ণাস Daily বা এর মতো অন্যান্যদের ইমান ধংসকারী মতবাদ দ্বারা আকৃষ্ট হচ্ছে নাতো? একটু খোঁজ খবর নেই। ইমানের মৌলিক বিষয়গুলো তাদের সাথে আলোচনা করি। নইলে হয়তো আমার সন্তান আমার ছোট ভাই-বোনদেরকে দেখবো তারা নিজেদের মুসলিম বলছে কিন্তু ইসলামের কোন গুরুত্ব তাদের মাঝে নেই। তারা হয়তো ভাববে আর দশটা ধর্মের মতো এটাও একটা। আমার বাবা মা মুসলিম ছিল তাই আমি মুসলিম মাত্র। আর এই কথার দাওয়াতটাই নাস ডেইলি প্রকাশ্যেই দিচ্ছে।
আল্লাহ তাআ'লা আমাদের হেফাজত করুন এবং সতর্ক হয়ে চলার তাওফিক দিন। আমিন।।
প্লিজ সচেতনতার উদ্দেশ্য পোস্টটি বেশি বেশি শেয়ার করুন।
References
[1]"https://en.wikipedia.org/wiki/Nas_Daily," [Online].
[2]"https://youtu.be/Yj1Xc-RDGYU?t=11," [Online].
[3]"https://youtu.be/c62fi6B11rI?t=6," [Online].
[4]"https://youtu.be/uNESr_U5q8Y?t=13," [Online].
[5]"https://www.youtube.com/watch?v=9IJteHdRdbw," [Online].
[6]"https://www.youtube.com/watch?v=BD1SsFHiUTQ," [Online].
[7]"https://www.youtube.com/watch?v=9xnyGzCDdrg," [Online].
[8]"https://www.youtube.com/watch?v=NUkRqoJvaBQ," [Online].
[9]"https://www.youtube.com/watch?v=RnJnNru9I78," [Online].
[10]"https://www.youtube.com/watch?v=nBkuaghzlMs".
[11]"https://www.youtube.com/watch?v=5FRT5p6UM7Q".
#collected